প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে। আসায় শিশু-কিশাের, যুবক-বৃদ্ধ সবাই সীমাহীন আনন্দিত। দলে দলে এসে তারা নবীজির হাতে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকেন। জান-মাল সব। কিছু নবীজি ও তার সঙ্গী সাহাবাদের জন্য উৎসর্গ করে নিজেকে ধন্যবােধ করেন। পাল্টে ফেলেন নিজেদের জীবনাচার । তবু যেন কিছু রয়ে গেছে। তাদের ভাবনায়। এরপর নবীজির সম্মানে বদলে ফেলেন তাদের শহরের নামও। ইয়াসরিব হয়ে যায় মদিনাতুন নবী। নবীজির শহর। সারা মদিনা নবীজির আগমনে ইসলাম কবুলের খােশে মাতােয়ারা । তখন কতিপয় কপালপােড়া শুধু নাখােশ । ইসলাম তাে গ্রহণ করেই নি। উল্টো দেশ-পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এদের মাঝে একজন উম্মে সুলাইম (রা.)-এর স্বামী। নযর ইবনে মালেক। উম্মে সুলাইম সম্পর্কে নবীজির খালা। মদিনার মুসলমানদের মধ্যে তিনি প্রথম সারির একজন। তার স্বামী নযর ইবনে মালেককে ইসলাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন । সে তাে দাওয়াত গ্রহণ করেনি উল্টো স্ত্রীর ইসলাম গ্রহণের উপর রাগ করে সিরিয়ায় পাড়ি দেয়। সংবাদ আসে, সিরিয়া যাওয়ার পথে শত্রু কবলিত হয়ে মারা গেছে নযর । আরবের প্রসিদ্ধ নাজ্জার গােত্রের সম্ভ্রান্ত যুবক, তালহা। কিশাের জীবন পাড়ি দিয়ে যুবকে পা রেখেছে । যশ-খ্যাতি সম্মান সবই আছে । তবু ভালাে নেই তার মনটা । কয়েক দিন ধরে ভাবছেন উম্মে সুলাইমকে একটা কথা বলবেন । কিন্তু পারছেন না। এভাবে কতদিন? যে করেই হােক, আজ তাকে বলবেন । প্রতিজ্ঞা তালহার । পড়ন্ত বিকেলে উম্মে সুলাইম গােত্রের দিকে এগােলেন তালহা ।। মদিনা প্রিয়নবীর শহর । এটি নবীজির নানার দেশও। দৃষ্টি-দূর পর্যন্ত শূন্য মাঠ । আর আছে পাহাড়। পানির কূয়া, আর সমান্য সবুজে গড়ে উঠা শত শত মানুষের বাস। হেজাযের মরুবালি আর কঙ্কর পেরিয়ে একটি জনবসতি । এদিক-ওদিক ছড়ানাে-ছিটানাে কিছু খেজুর বাগান। নিস্তেজ আলােতে গাছগুলাে লম্বা ছায়া বিছিয়ে দিয়েছে। একটু পরই সূর্যটা পাহড়ের আড়াল নেবে । তখন বাগানের অদূরেই দাঁড়ানাে উম্মে সুলাইম! তালহা কাছে এসে সাহস করে উম্মে সুলাইমকে মনের কথা বলেই ফেললাে। আমি তােমাকে বিয়ে করতে চাই ।। উম্মে সুলাইম বললাে, আমি একজন মুসলিম নারী । তুমি তাে মুশরিক। একজন মুশরিকের সঙ্গে কোনাে মুসলিম মেয়ের বিয়ের অনুমতি নেই।। তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করাে, তাহলে আমি তােমার সাথে বিয়েতে সম্মত। তখন আমি তােমার কাছে মহরও চাইবাে না। তােমার ইসলাম গ্রহণই আমার জন্য মােহর হবে ।। টকবকে যুবক তালহা চুপ করে আছেন। উম্মে সুলাইম বললেন- হে । যুবক! তুমি কি কখনাে ভেবে দেখেছ! যে সবের উপাসনা তুমি করাে। সেগুলাে সম্পকে! এ তাে মাটি, পানি ও পাথর ছাড়া আর কিছু নয়! এগুলাে তােমার কোনাে উপকার করতে পারে; না অপকার? এগুলাে তােমরা নিজ হাতে বানাও না? যুবক বললাে- হা বানাই । উম্মে সুলাইম বললেন, নিজের মাথা পাথরের সামনে নত করে পড়ে থাকতে লজ্জা করে না? একটুও কি বিবেকে বাঁধে না? কথা গুলাে শােনে ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গেলাে যুবকের। বললােঠিক আছে। আমাকে একটু সুযােগ দাও ভাবার । বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন তালহা। পা দিয়ে হাটছেন না। যেন কোনাে কাটা গাছের বিশাল টুম টেনে নিয়ে যাচ্ছেন । মাথায় বইছে ভাবনার ঝড় । যুবতীর কথাগুলাে বারবার কানে ধব্বনিত হচ্ছে……. তােমার মাবুদ কি মাটি-পাথরের তৈরি নয়? এগুলাে কি নিজ হাতে বানাও নি? নিজীর্ব পাথরকে প্রভু মনে করাে! এগুলাের সামনে মাথা নত করে পড়ে থাকো! তােমার বিবেকে বাধে না! লজ্জা হয় না একটুও! রাতে তালহার ঘুম আর হলাে না । যেন তার ঘুম নামের দৌলত কেউ ছিনিয়ে নিয়েছে। সারা রাত উম্মে সুলাইমের কথাগুলাে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । তাকে জবাব দেয়ার জন্য তালহা অনেক যুক্তি-প্রমাণ জড়াে করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু হতাশ হলেন। মূর্তিকে মাবুদ মনে করে উপাসনা করাটা কেবলই অন্তসারশূন্য বলে মনে হলাে। তবু মূর্তিপূজাই ঠিক বলে স্থির থাকা আহমকি ছাড়া আর কি! না, উম্মে সুলাইমের প্রতিবাদ করার মতাে কিছু নেই। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। উম্মে সুলাইমের প্রেম ও বিশ্বাসের কাছে তিনি হারবেন । পরদিন সকাল বেলা উম্মে সুলাইমের আঙ্গিনায় হাজির তালহা। উচু আওয়াজে পড়ে নিলেন-আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইলল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ । মুচকি হেসে উম্মে সুলাইম বললেন, আমি……..। তালহা বিয়ে করে নিলেন তার প্রিয় উম্মে সুলাইমকে। চির শান্তির পথে চললাে। আশ্রয় নিল নিরাপদ কুঠিরে ।। হৃদয়ের আহ্বান : প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! আমরা যদি সে সব সাহাবা ও সাহাবিয়া (রা.)দের জীবন-যিন্দেগী, সঠিক প্রেম-ভালােবাসা ও আদর্শ মেনে নিতাম কতই না ভাল হতাে। তারা কিভাবে একে অপরকে ভলােবেসেন বা বিয়ে করেছেন । তালহা (রা.) ভালােবাসার জন্য বাপদাদার ধর্ম ছেড়ে দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন । ভুল পথ ছেড়ে সঠিক পথে এসেছেন। আর উম্মে সুলাইম (রা.) তার স্বামীর ইসলাম ধর্ম গ্রহণটাকে মােহর হিসাবে নিয়েছেন । কত বড় কুরবানী তাদের । আমাদের সমাজের মাঝে মােহরটাকে বাড়াতে বাড়াতে স্বামীর সাধ্যের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয় । যার কারণে মােহর আর আদায় হয় না। আর এ অবস্থায় মারা গেলে কি। উপায় হবে কবরে?
