নােবেল বিজয়ী শােয়াইজার এর বিনয়
শিক্ষা হলাে আলাে। এ আলাে যার মধ্যে প্রবেশ করে সে নিজে আলােকিত হয় এবং অপরকে আলােকিত করে। শিক্ষা আসলে কী এবং এর গুরুত্ব কতটুকু এ ব্যাপারে একটি সত্য ঘটনার উল্লেখ করছি। অনেক যুগ আগে এক ইংরেজ সম্ভান্ত ও ধনী ব্যক্তির ছেলে তাঁদের বাড়ীর সামনে পুকুরে পরে ডুবে যাচ্ছিল, এমতাবস্থায় তাদের বাগানের মালি এ দৃশ্য অবলােকন করে। নিজের জীবন বাজি রেখে পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে সেবারের মতাে ছেলের জীবন রৰা করে। ইংরেজ ব্যক্তি মালির এই কাজে সন্তুষ্ট হয়ে নগদ কিছু পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মালি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
ইংরেজ ভদ্র লােককে মালি অনুরােধ করেন তার ছেলের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে। ঐ ভদ্র লােক সানন্দে তা গ্রহণ করেন। এর অনেকদিন পরের ঘটনা ইংরেজ ভদ্র লােকের ছেলেটি এক দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। ডাক্তারের কোন ঔষধই কাজে লাগছেনা। অবশেষে পেনেসিলিন ইনজেকশন দেয়া হলে তিনি আরােগ্য লাভ করলেন। ঐ সম্ভান্ত ইংরেজ ভদ্র লােকের ছেলের নাম স্যার উইনস্টন চার্চিল যিনি পরবর্তীতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর ইতিহাসবিদ হিসেবে সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার পান। আর বাগানের ঐ মালির ছেলের নাম স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। যিনি পেনিসিলিন ইনজেকশন আবিষ্কার করেন। স্যার উইনস্টন চার্চিল, স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করে শুধু তার ছেলের জীবন রক্ষা পায়নি। দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। শিক্ষা মানুষের জীবনে যে কত অপরিহার্য তা এ গল্প থেকেই বুঝা যায় ।
বিনয় হলাে মানুষের অন্যতম গুণ। অনেকদিন আগে, একজন নােবেল পুরস্কার বিজয়ী আসবেন বলে বহু উচ্চ পদস্থ কর্মচারী আর সাংবাদিক শিকাগাের বেল স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। সেই বিরাট মানুষটি ট্রেন থেকে নামলেন, ক্যামেরাগুলাে সচল হয়ে উঠল, শহরের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা করমর্দনের জন্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলাে যে, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়াতে তারা কতটা সম্মানিত বােধ করছে।
আরো পড়ুন: পাপ থেকে আত্মরক্ষা
দ্রলােক তাদের ধন্যবাদ দিলেন। তারপর একজন বয়সী মহিলা তার ব্যাগগুলাে সামলাতে পারছেননা দেখতে পেয়ে সবাইকে এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে বলে তাড়াতাড়ি ভীড়ের মধ্যে দিয়ে মহিলাকে বাস অবধি পৌঁছে দিয়ে, তার নিরাপদ। যাত্রা কামনা করে অপেক্ষামান লােকদের কাছে ফিরে এসে তিনি বললেনআপনাদের অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্যে দুঃখিত।” তিনি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত। ডক্টর এ্যালবার্ট শােয়াইজার। এই ঘটনা দেখে অভ্যর্থনা কমিটির একজন। সাংবাদিক বলেছিল, “এই প্রথম আমি নৈতিক উপদেশকে পায়ে হেঁটে যেতে। দেখছি।”
পরীক্ষার মহড়াও বলা যেতে পারে। নিজে নিজে পরীক্ষা দিয়ে বইয়ের। থে মিলিয়ে দেখলে ভুলগুলাে ধরা পরবে ফলে ফাইনাল পরীক্ষা আরাে ভাল হবে।
এরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া: ফাইনাল পরীক্ষার আগের দরকার পরীক্ষার প্রস্তুতি।
সতি সন্তোষজনক হলে পরীক্ষাও ভাল হয়। এজন্য প্রতিটি ছাত্রকে সময় ও শম দিতে হবে। সব বিষয়ের ভাল প্রস্তুতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভাল করতে সহায়তা করে।
পরিকল্পনা ও কৌশল
রবি সারা বছরই ক্লাস করে। বাসায়ও নিয়মিত পড়শােনা করে কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় রবি ফেল করেছে। কারণ কী? রবির লেখাপড়ায়। অধ্যয়ন পরিকল্পনা ও কৌশল নেই। রবির মতাে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই পড়াশােনায়। পরিকল্পনা ও কৌশলের অভাবে সবার কাছে খারাপ ছাত্র হিসেবে পরিচিত। অধ্যয়ন পরিকল্পনা ও কৌশল আয়ত্তের জন্য কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে। কঠিন বিষয়ে সময় বেশি দেয়া: যে বিষয়টি তােমার কাছে কঠিন মনে হয় সে বিষয়ে বেশি সময় দিতে হবে। অন্য বিষয়ে এক ঘণ্টা সময় দিলে কঠিন বিষয়ে দুই ঘণ্টা সময় দিতে হবে।
সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হয়ত তােমাকে স্কুলে কাটাতে হয়। বাকি সময়টুকু অর্থৎ রাতের ঘুম ছাড়া সকালে স্কুলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে রাতে ১১টা পর্যন্ত সময়টুকু কীভাবে বাসায় লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করবে, তার একটি নির্দিষ্ট রুটিন থাকবে। প্রথমেই তুমি স্কুলের কাজগুলাে শিখবে। তার পর যে সময়টুকু অতিরিক্ত পাবে, তা তুমি কঠিন বিষয়গুলাের জন্য ব্যয় করবে। শিক্ষকের সহযােগিতা নেবে। এমনকি ভাল ছাত্রদেরও সহযােগিতা নেবে। তাছাড়া এ বিষয়ে একাধিক বই সংগ্রহ করে পড়বে। পড়ার সাথে সাথে লিখতেও হবে। প্রতিদিন তােমাকে অবশ্যই স্কুলে। যেতে হবে। সেখানে স্কুলের দেয়া রুটিন অনুসরণ করবে। বিদ্যালয় বন্ধের সময়। বাসায় লেখাপড়ার সময় আরাে বাড়িয়ে দেবে। তাছাড়া কোন বিষয় কোন দিন। পড়বে তাও ঠিক করে নিবে।
কৌশল : পড়াশােনায় সঠিক কৌশল অবলম্বন করা উচিত। কোন নিয়মে পড়লে অল্প সময়ে বেশি পড়া আয়ত্ত করা যায় তা বের করার জন্য বিভিন্ন। লেখকের বই পড়তে পার। পত্র পত্রিকায় এ বিষয়ে অনেক টিপস দিয়ে থাকে। এগুলাে অনুসরণ করতে পার। কৌশলের কারণে একজন গােল্ডেন A+ পায়, অন্যজন কৌশল অবলম্বন না করার কারণে B পায়। সুতরাং শ্রেষ্ঠ কৌশল ফাটি তা তােমাকে অনুসরণ করতে হবে। শুধু পড়াশােনায় নয়, জীবনের। ল ক্ষেত্রে দরকার সঠিক কৌশল অবলম্বন। এ প্রসঙ্গে শিবখেরার বিখ্যাত। টি হলাে- বিজয়ীরা ভিন্ন কাজ করে না, তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করে।
জীবনের লক্ষ্য কি স্থির করেছ?
জীবনের অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বারাক ওবামা এ অবধি আসতে পেরেছেন কারণ তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল। তিনি যা চেয়েছিলেন, সেটা তার কাছে স্পষ্ট ছিল। স্কুলে থাকার সময় ক্লাস পরীক্ষার রচনায় লিখেছিলেন “আই ওয়ান্ট টু বি দি প্রেসিডেন্ট অব আমেরিকা।” আর এ লক্ষ্যে কতটা আস্থা থাকলে তা একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ সিনেট সদস্য হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় শুভাকাঙক্ষীদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘােষণা করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। । লক্ষ্য অর্জনের জন্য পাঁচটি শর্ত পূরণ করতে হবে- লক্ষ্য স্থির করা, লক্ষ্য অর্জিত হয়ে গেলে যেমন সেই অনুভূতিটা নিজের মধ্যে আনা, লক্ষ্যে সব সময় একাত্ম থাকা, নীরবে কাজ করে যাওয়া।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাত্র ১০% লােক জীবনের লক্ষ্য স্থির করে আর মাত্র ৩% লােক লক্ষ্যকে লিখিতভাবে রেখে কাজ করে। একটা ঘটনা বলছি, ১৯৫২ সালে USA ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাপনী ব্যাচের ছাত্রদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাদের লক্ষ্য সম্বন্ধে। তাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য লিখে রাখা হয়। এতে দেখা যায়, ৯৭ ভাগ ছাত্রই নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য লিখে রাখেন না। বাকী ৩ ভাগ ছাত্র আগামী ২৫ বছরে কে কত আয় করবেন, কেমন জীবন যাপন করবেন তা স্পষ্ট করে লিখে রেখেছিলেন। ১৯৭৭ সালে ইয়েল কর্তৃপক্ষ তাদের সেই শিক্ষার্থীদের ঠিকানা বের করে সমীক্ষা চালান এবং দেখতে পান সেই ৩ ভাগ ছাত্রের আয় বাকী ৯৭ ভাগের সম্মিলিত আয়ের চেয়েও তিনগুন বেশি। সেই তিন ভাগ শিক্ষার্থী কি। অসম্ভব মেধাবী ছিলেন? মােটেই না। তবে, তাঁরা জানতেন তারা কী চান। তাদের লক্ষ্য পূর্ব থেকে স্থির করা ছিল।
সাহেবকে দিয়ে বাড়ীতে দোয়া খায়ের করান। ডাক্তার সাহেব মৌলভী সাহেবের দোয়া কালাম বা ঝারফুঁক সম্বন্ধে উম্মা প্রকাশ করে বলেন যে-এই সমস্ত রােগ কি কোন ঝারফুকে কাজ হয়? এ মনােভাব মৌলভী সাহেব বুঝতে পারেন এবং দুপুর বেলা যখন মৌলভী সাহেব দোয়া কালাম পড়তেছেন তখন ডাক্তার সাহেবও রােগী দেখতে আসেন। মৌলভী সাহেব ডাক্তারকে দেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালী করতে আরম্ভ করেন। এতে ডাক্তার অত্যান্ত রাগান্বিত হলেন এবং তার হার্টবিট বাড়তে লাগলাে কিছু ক্ষনের মধ্যে তিনি অসুস্থ অনুভব করলেন।
রােগী না দেখে চলে যেতে উদ্যত হলে-মৌলভী সাহেব ডাক্তারকে অনুরােধ করে থামালেন এবং তাকে শান্ত হতে বললেন, মৌলভী সাহেব তখন বললেন ডাক্তার সাহেব আপনি মনে করেন আমার দোয়াদুরুদ কোন কাজে আসবে না, এতে অসুখ ভাল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমি আপনার কাছে জানতে চাই আমি আপনাকে দুএকটি কটু কথা বলতে আপনি রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে রােগী না দেখে চলে যেতে উদ্যত হয়েছেন। আমার কথায় যদি আপনার মনেও শরীরে এক মুহূর্তে প্রবল ক্রোধের সৃষ্টি করতে পারে, তবে আমার দোয়া কালামে কেন রােগীর মনের উপর আশার বাণী সৃষ্টি করতে পারবে না।